বেনাপোল কাস্টম হাউসে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা কম আদায় হয়েছে।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ১৮৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩ হাজার ৪৪৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। সেই হিসাবে লক্ষ্যের চেয়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন: বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সচল
কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, গত দেড় বছর করোনার কারণে উচ্চ শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি কম হয়েছে। যে কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় সম্ভব হচ্ছে না।
কয়েক বছর ধরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে বেঁধে দেয়া লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারছে না বেনাপোল কাস্টম হাউজ। প্রতি অর্থবছরই রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি থাকছে।
আরও পড়ুন: ঈদে ৩ দিন বেনাপোলে আমাদনি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে
বেনাপোল কাস্টমস থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৫৬৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। সেখানে আদায় হয়েছিল ২ হাজার ৬৩৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৯২৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ১ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন: বেনাপোল বন্দরকে ঘিরে সক্রিয় শক্তিশালী চোরাচালান সিন্ডিকেট
দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোল। সরকারের বেশি রাজস্ব আদায় হয় এখান থেকে। তবে বন্দরটি দিয়ে পণ্য আমদানি হয় বেশি। রপ্তানি হয় তার চার ভাগের এক ভাগ।
কাস্টম হাউজের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৮৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮১১ মেট্রিক টন পণ্য। বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ১৮ লাখ ৭২ হাজার ২১০ মেট্রিক টন পণ্য।
যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় দেশে স্থলপথে যে পণ্য আমদানি হয় তার ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। প্রতি বছর বন্দরটি দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়। এর বিপরীতে রপ্তানি হয় ৮ হাজার কোটি টাকার পণ্য।
বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাবের পাশাপাশি অবকাঠামোগত ও নীতিগত কারণেই আমদানির তুলনায় রপ্তানিতে অনেক পিছিয়ে আছে দেশের বৃহত্তম এ স্থলবন্দর।
এ বিষয়ে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, করোনার ছোবল এবং পণ্য ছাড়করণের ক্ষেত্রে বৈধ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় আমদানি কমে যাওয়ার একটি কারণ। এতে রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে। পাশাপাশি চাহিদা অনুপাতে বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়া এবং উচ্চ শুল্কহারের পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের শুরুতে মহামারি করোনায় নাকাল দেশের ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় উচ্চশুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি কমে আসছে। ফলে রাজস্ব কম আসবে এটাই স্বাভাবিক। তবে বেনাপোল বন্দরে বারবার রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে অনেক ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন। বন্দর কোনও ক্ষতিপূরণ না দেয়ায় অনেক আমদানিকারক বন্দর ছেড়েছেন।’
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, দেশের স্থলপথে আমদানি-রপ্তানির ৭০ শতাংশ হয় বেনাপোল দিয়ে। তবে কাঙ্ক্ষিত অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় অনেকে এ পথে বাণিজ্যে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ফলে সরকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। বন্দরের সক্ষমতা বাড়লে বেনাপোল দিয়ে সরকারের রাজস্ব দ্বিগুণ আদায় হতো।
তবে এরই মধ্যে বেনাপোল বন্দর সম্প্রসারণে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল।
তিনি বলেন, জায়গা অধিগ্রহণের পাশাপাশি কয়েকটি আধুনিক পণ্যাগার নির্মাণ করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরার জন্য বাজেট হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তা বাড়াতে উঁচু প্রাচীরও নির্মাণ করা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান বলেন, দেড় বছরের বেশি সময় ধরে করোনার প্রভাব চলছে। ফলে গত বছর তেমন আমদানি হয়নি। চলতি বছরের এপ্রিলে আমদানি বাড়লেও উচ্চ শুল্কযুক্ত পণ্য কম এসেছে। এতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না।
বন্দরের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে কমিশনার বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধা বাড়ানোর পক্ষে। এরই মধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধির জন্য চিঠি দিয়েছি। বন্দরের সক্ষমতা বাড়লে বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি বেড়ে যাবে। সেইসঙ্গে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আহরণ। আশা করছি, করোনার পরিস্থিতি উন্নতি হলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে।